Bengali Motivational Story: জন্মগতভাবে বা বংশগতভাবে, আমরা নীজেকে বিভিন্ন ভাবে দোষারোপ করে থাকি। যেমন আমরা বলি, গরীবের ঘরে কেন জন্ম হয়েছে?, আমি তো জীবনে কিছুই করতে পারব না! কেন বিল গেটস এর পরিবারে জন্ম হলো না? কেন মার্ক জাকারবার্গ এর পরিবারে জন্ম হলো না? আমি কেন কোটি পতির ছেলে হলাম না? কেন আমার কাছে বাড়ি-গাড়ি নেই? এসব চিন্তা করে আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে দুর্বল করে ফেলি। “সফল কিভাবে হবো!” এই চিন্তা থেকে বের হয়ে সফল হওয়ার জন্য আমি আপনাদের সাথে একটি গল্প শেয়ার করছি:-

এক ছিল কাক। সে তার জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল না। সে সবার সাথে নিজের তুলনা করত। একদিন এক কোকিলকে দেখে মনে মনে ভাবল যে, কোকিল আমার মতই কালো অথচ তার এত সুন্দর কন্ঠের জন্য মানুষ তাকে খুব ভালোবাসে। এরূপ ঘটনা দেখে তখন কাকটি সৃষ্টিকর্তার কাছে এসে বলল, তুমি আমাকে এরকম কন্ঠ কেন দিয়েছ? যা মানুষের অপ্রিয়। আমাকে দেখলেই দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। অথচ কোকিল কত আদর পায়! তখন সৃষ্টিকর্তা বলল, তুমি কোকিল হিসেবে বাঁচতে চাও। কাক বলল, হ্যা আমি কোকিল হিসেবে বাঁচতে চাই। এরপর সৃষ্টিকর্তা তাকে কোকিল বানিয়ে দিল। কিছুদিন এভাবে যেতে না যেতেই, এক শিকারি তাকে ধরার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেছে। এই ভয়ে সে উড়ে পালাল। উড়তে উড়তে দেখল, মুরগি গুলাকে মানুষ খাবার দিচ্ছে, আবার তাদের থাকার জন্য ঘর বানিয়ে দিচ্ছে। এই দেখে কাক আবার চলে গেল সৃষ্টিকর্তার কাছে। গিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে বলল, তুমি আমাকে মুরগি এর জীবন কেন দিলে না। ওদের জীবন কত সুন্দর, মানুষের আদর যত্ন পায়, শিকারিরা ধরতে আসে না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি মুরগি হয়ে বাঁচতে চাই। সৃষ্টিকর্তা কাককে মুরগির জীবন দিল। তারপর কাকের মুরগি হিসেবে জীবন যাপন ভালোই যাচ্ছিল। কিন্তু পায়রাকে দেখে দুঃখ পেল, কারণ পায়রা উড়তে পারে অথচ ও উড়তে পারে না। এই ভেবে সে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ একদিন লক্ষ্য করল যে, একজন মানুষ তাদের দলের কোনো একটা মুরগিকে ধরে জবাই করে ফেলেছে। এই ঘটনা দেখে কাক আবার চলে গেল সৃষ্টিকর্তার কাছে, বলল আমি মুরগি হিসেবে বাঁচতে চাই না। সৃষ্টিকর্তা কাককে বলল, তুমি কি হিসেবে বাঁচতে চাও? কাক বলল, আমি পায়রা হিসেবে বাঁচতে চাই। সৃষ্টিকর্তা কাককে পায়রা এর জীবন দিল। কাক তো পায়রা এর জীবন নিয়ে মহা খুশি। কিন্তু এ সুখ বেশি দিন স্থায়ী হল না। কারণ কাক একদিন লক্ষ্য করল যে, মানুষের খাওয়ার দৃষ্টি থেকে পায়রাও বাদ যায় নাই।
সেই ভয়ে কাক আবার সৃষ্টিকর্তার কাছে এসে বলল আমি পায়রা হিসেবে বাঁচতে চাই না।
সৃষ্টিকর্তা কাককে বলল, তুমি কি হিসেবে বাঁচতে চাও? তোমাকে তো তোমার ইচ্ছে অনুযায়ী জীবন দিলাম অথচ তুমি জীবন-যাপন করতে পারলে না।
এত কিছু বাদ দিয়ে তুমি তোমার নিজের জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চেষ্টা করো। তুমি তোমার জীবন নিয়ে যে কষ্ট অনুভব করতেছ, সেই কষ্ট দুর করার জন্য আমি তোমাকে কিছু কথা বলতেছি। মন দিয়ে আমার কথাগুলো শোনার চেষ্টা কর:---
সৃষ্টিকর্তা কাককে জিজ্ঞাস করল, তুমি চিকেন বিরিয়ানি এর নাম শুনেছ? কাক বলল, হ্যা আমি শুনেছি। সৃষ্টিকর্তা কাককে আবার জিজ্ঞাস করল, তুমি মোরগ পোলাও এর নাম শুনেছ। কাক বলল হ্যা আমি শুনেছি। সৃষ্টিকর্তা কাককে সর্বশেষ জিজ্ঞাস করল, তুমি কখনও কাক পোলাও অথবা ক্রো বিরিয়ানি এর নাম শুনেছ? উত্তরে কাক বলল, না তো, এইরকম নাম আমি কখনই শুনি নাই।
সৃষ্টিকর্তা কাককে বলল:-
তাহলে তোমার দুঃখ কোথায়? তোমাকে তো কেউ ধরতেছে না, মারতেছেও না, কাটতেছেও না, খাচ্ছেও না। তুমি তো সবার থেকে স্বাধীন একটি পাখি। তাহলে তোমার জীবন নিয়ে এতো দুঃখ অথবা এতো কষ্ট কিসের। যাও গিয়ে আনন্দ করো, ফুর্তি করো, উপভোগ করো তোমার স্বাধীন জীবনটি। যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারো, তোমাকে তো কেউ ধরে খাচ্ছে না। কাক নিজের ভুল বুঝতে পেরে শান্তি মনে ফিরে গেল।
এই গল্পটি থেকে আশা করি আপনি কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন যে, আপনি অন্য সবার মত না। সব ব্যক্তির থেকে আপনি একজন আলাদা ব্যক্তি। তাহলে নিজের জীবন নিয়ে এতো দুঃখ কিসের! এতো দুঃখ না করে, যান গিয়ে আনন্দ করেন এবং উপভোগ করুন এই পৃথিবীকে। আর সব সময় মনে রাখবেন, আপনি সবার থেকে আলাদা। আর এই কথাটা মনে রাখলে আপনি জীবনে সফল হতে পারবেন। অন্যথায় ব্যর্থতাকে সিকার করে নিতে হবে।
0 comments: